ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক এবং ঘ ইউনিটে ইংরেজি প্রস্তুতি নিয়ে তোমাদের মনের মধ্যে যে প্রশ্নগুলো জাগে, আমরা সেগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি এই লেখাতে। চলো, দেখে নেওয়া যাক।

১. ঢাবি ক/ঘ ইউনিটে ইংরেজি প্রশ্নের মানবন্টন কেমন থাকে?

-ক ইউনিট

এমসিকিউ: ১৫ নম্বর (১৫ টি প্রশ্ন -প্রতি প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর)

লিখিত: ১০ নম্বর (২-৫ টি প্রশ্ন থাকবে)

-ঘ ইউনিট

এমসিকিউ: ১৫ নম্বর (১৫ টি প্রশ্ন -প্রতি প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর)

লিখিত: ১৫ নম্বর (২-৫ টি প্রশ্ন থাকবে)

২. ঢাবি ক/ঘ ইউনিটে ইংরেজিতে এমসিকিউ প্রশ্নের প্যাটার্ন কেমন?

- ঢাবি ক/ঘ ইউনিটে ইংরেজি প্রশ্ন যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়, বহুমাত্রিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে থাকে। ক/ঘ ইউনিটে এমসিকিউ প্রশ্ন বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে তিনটি অংশ থেকে এসে থাকে।

ক. কম্প্রিহেনশন

খ. গ্রামার

গ. ভোকাবুলারি

ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে কাঙ্ক্ষিত নম্বর পেতে হলে এমসিকিউ পার্টের এই তিনটি অংশে সমান পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে।

৩. ভর্তি পরীক্ষায় কম্প্রিহেনশন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

- ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় কম্প্রিহেনশন একটি অপরিহার্য টপিক, যেখানে শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য একটি অনুচ্ছেদের আলোকে ৫-৬ টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। বিগত বছরগুলোতে লিখিত অংশ যুক্ত করার পূর্বে যখন শুধু এমসিকিউ অংশে ২৫ নম্বর বরাদ্দ ছিল তখন অনিবার্যভাবে কম্প্রিহেনশন থেকে প্রশ্ন আসতো। এমনকি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে লিখিত অংশ যোগ করার পর এমসিকিউতে ১৫ নম্বর প্রদানের বাস্তবতায়ও বিগত দুই বছরেরই কম্প্রিহেনশন থেকে ঘ ইউনিটে প্রতিবারে ৫ টি করে প্রশ্ন ছিলো - যা কিনা মোট প্রশ্নের এক-তৃতীয়াংশ! অপরদিকে ২০১৯ এ ক ইউনিটে কম্প্রিহেনশন থেকে ৫ টি প্রশ্ন ছিলো তবে ২০২০ এ কম্প্রিহেনশন থেকে ক ইউনিটে ছিলো না। সুতরাং বুঝতেই পারছো ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি অংশে ভালো করতে কম্প্রিহেনশন অনবদ্য ভূমিকা পালন করে।

৪. কম্প্রিহেনশন কিভাবে ভালো করবো?

- কম্প্রিহেনশনে ভালো করতে হলে প্রশ্নব্যাংক থেকে নিয়মিত অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই। যেহেতু ক/ঘ ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে থাকে সেহেতু কম্প্রিহেনশনগুলো সাধারণত বিজ্ঞানভিত্তিক টপিক থেকে এসে থাকে। মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে ২০০-৩০০ শব্দে জীবনে প্রথমবারের দেখা একটি অনুচ্ছেদ পড়ে তার আলোকে ৫-৬ টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা নি: সন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে ঘড়ি ধরে কম্প্রিহেনশনের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ক্রমাগত অনুশীলন করলে এই অংশে সর্বোচ্চ ভালো করা সম্ভব। আর হ্যা, কোনভাবেই ইংরেজিতে কম্প্রিহেনশনের প্রশ্ন শুরুতে উত্তর করবে না; বরং অন্যান্য প্রশ্ন সম্পন্ন হলে তবেই কম্প্রিহেনশন শুরু করবে। কম্প্রিহেনশন উত্তর করতে আরো যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবে-

ক. তোমরা শুরুতেই কম্প্রিহেনশন না পড়ে কম্প্রিহেনশন সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন পড়বে। প্রথমবার মতো প্রশ্ন পড়ার ক্ষেত্রে অপশন পড়বে না। বরং প্রশ্নের কি-ওয়ার্ড খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে এবং প্রয়োজনে আন্ডারলাইন করবে।

খ. প্রশ্ন পড়া শেষ হলে তবেই কম্প্রেহেনশন পড়া শুরু করবে এবং কম্প্রেহেনশন পড়ার সময় প্রশ্নের থাকা কি-ওয়ার্ডগুলো প্যাসেজ এর মাঝে চিহ্নিত করবে। পরবর্তীতে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য মেসেজ করতে গেলে তোমাকে আর সম্পন্ন টুকু করতে হবে না বরং সেই দাগাঙ্কিত অংশ পড়লেই উত্তর পেয়ে যাবে।

গ. এভাবে করে মেসেজ টি পড়া শেষ হলে আবার প্রশ্ন করা শুরু করবে এবং অপশন মিলিয়ে অনুচ্ছেদ থেকে সঠিক উত্তর খুঁজে বের করবে।

৫. গ্রামারের জন্য কী করতে পারি?

- ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় গ্রামার অংশে বেশ কনসেপচুয়াল প্রশ্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে verb (right form of Verb, Tense, Sequence of Tense, Non-finite and Modals, subject Verb Agreement), parts of speech ( noun-pronoun, adjective-adverb, conjunction), Translation, Correction বিগত বছরগুলোতে অজস্র প্রশ্ন এসেছে। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে voice, narration, transformation, punctuation এর মতো কম গুরুত্বপূর্ণ টপিক থেকে একাধিক প্রশ্ন করতে দেখা যাচ্ছে। তাই অন্যান্য টপিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করার চেষ্টা করবে। আর গ্রামার অংশে প্রশ্নসংশ্লিষ্ট বাক্যগুলো বেশ অর্থবহ এবং বিজ্ঞানের টপিকধর্মী হওয়ায় বিগত বছরের প্রশ্ন খুব ভালো করে অনুশীলন করলে সঠিক উত্তর করা সহজ হবে।

৬. আর ভোকাবুলারির জন্য কি করতে পারি?

- একটি কথা মনে রাখবে, যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ইংরেজি থেকে প্রশ্ন আসলেই সেখানে সুনিশ্চিতভাবে একাধিক প্রশ্ন থাকবে Synonym-Antonym. ঢাবি ক/ঘ ইউনিটও এর ব্যতিক্রম নয়। সেকারণে তোমরা অবশ্যই Synonym-Antonym সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পড়বে এবং এখন থেকেই একাধিক প্রশ্ন কমন পাবে। সর্বোপরি Synonym-Antonym এর প্রশ্ন যথেষ্ট বৈচিত্র্যময় হয়ে থাকে। যেমন, সরাসরি Synonym-Antonym থেকে প্রশ্ন আসে আবার তেমনি সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ, এক কথায় প্রকাশ, সঠিক বাক্যের আলোকে অর্থ নির্ণয়সহ বিভিন্ন উপায়ে প্রশ্ন আসে। তাই এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকবে।

Synonym-Antonym এর বাইরে সবচেয়ে বেশি যে টপিক থেকে প্রশ্ন আসে তা হলো Appropriate Preposition. তাই Appropriate Preposition পড়া না থাকলে ইংরেজি প্রস্তুতির অনেক বড় অংশ অপূর্ণ থেকে যায়। একারণে অত্যন্ত একাগ্রতার সাথে Preposition আয়ত্ত করবে এবং দেখবে একাধিক প্রশ্ন কমন পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

পাশাপাশি group Verb, spelling, idiomatic phrase থেকেও প্রশ্ন আসে। তাই এই টপিক তিনটিতেও যথারীতি বিগত বছরের প্রশ্নগুলো খুব ভালো করে আয়ত্ত করলে পরীক্ষায় ইনশাআল্লাহ কমন পাবে এবং সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে।

৭. লিখিত নাকি এমসিকিউ- কোনটি বেশি জরুরী?

- আসলে লিখিত আর এমসিকিউ, কোনটিই একটি অপরটির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মনে রাখবে সেই সকল পরীক্ষার্থীদের লিখিত খাতা মূল্যায়ন করা হবে যা কিনা এমসিকিউ অংশে উত্তীর্ণ হবে। তাই তুমি যদি এমসিকিউ পরীক্ষায় ন্যূনতম নম্বর না পাও, তবে তুমি লিখিত অংশে যত কিছুই যত সুন্দর করে লেখো না কেন, তা গ্রাহ্য করা হবে যা। তাই তোমার শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত/সমাধানকৃত লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য হলেও এমসিকিউতে ভালো করতে হবে।

অপরদিকে তুমি এমসিকিউতে পাশ করলে ঠিকই, তোমার লিখিত খাতা মূল্যায়নও হলো তবে তুমি যদি সেখানে সামর্থ্য অনুযায়ী লিখতে না পারো কিংবা আশানুরূপ নম্বর না পাও তবে তোমার শত-সহস্র প্রচেষ্টা বিফলে যেতে পারে কিংবা কোনভাবে চান্স নিশ্চিত করলেও কাঙ্ক্ষিত বিষয় অধরাই থেকে যাবে। সুতরাং লিখিত এবং এমসিকিউ উভয়ের মাঝে সমন্বয় এবং সামঞ্জস্য বজায় রেখে প্রস্তুতি নিব।

৮. লিখিত পরীক্ষার জন্য কোন টপিক গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

-

ক ইউনিট:

• বিগত দুই বছরেরই ক ইউনিটে লিখিত অংশে কবিতা থেকে প্রশ্ন এসেছিলো।‌ তাই ইংলিশ ফর টুডে বইয়ে থাকা ৭-৮ টি কবিতা খুব ভালো করে পড়বে। এক্ষেত্রে কবিতা থেকে আসা প্রশ্নগুলোর প্যাটার্ন ছিল অনেক টা এরকম- একটি কবিতার নির্বাচিত অংশ বিশেষ থেকে কবিতার নাম, কবির নাম এবং কবিতা সংশ্লিষ্ট ছোট প্রশ্ন ছিলো।

• সেই সাথে বিগত দুই বছরেরই ক ইউনিটে Literature Related Terms থেকে প্রশ্ন এসেছিলো। যেমন ২০১৯ সালে rhyme এবং ২০২১ সালে personification. তাই literary terms (যেমন- simile, metaphor, oxymoron, paradox, irony সহ অন্যান্য figure of speech) সম্পর্কে ধারণা অর্জন করবে।

• সর্বোপরি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট এক/একাধিক টপিক থেকে ৬-১০ টি বাক্যসম্বলিত (২-৩ নম্বরের জন্য) শর্ট প্যারাগ্রাফ লিখিত অংশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঘ ইউনিট:

• ঘ ইউনিটে বিগত দুই বছরেই অনুবাদ থেকে প্রশ্ন এসেছিলো। তাই ঘ ইউনিটে অনুবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ইংরেজি অংশে একটি অনুচ্ছেদ বাংলা থেকে ইংরেজি অথবা ইংরেজি থেকে বাংলা করতে হয় যেখানে ৫ নম্বর বরাদ্দ ছিল।

• সেই সাথে বিগত দুই বছরেই ঘ ইউনিটে ১০ নম্বরের প্যারাগ্রাফ এসেছিলো। তাই ঘ ইউনিটে লিখিত পরীক্ষায় প্যারাগ্রাফ মূলত পার্থক্য গড়ে দেয়। এক্ষেত্রে ইতিহাস/মুক্তিযুদ্ধ/বঙ্গবন্ধু/সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ অধিক গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

• বিগত বছরগুলোতে আসেনি কিন্তু ভবিষ্যতে আসতে পারে এমন দৃষ্টিকোণ থেকে আরো কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ টপিক থেকে লিখিত অংশের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেমন- sentence making, fill in the blanks, summary writing, question answering প্রভৃতি।

৯. লিখিত অংশের জন্য কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি?

- লিখিত অংশে ভালো করার একটাই মূলমন্ত্র; তা হলো লেখা, লেখা এবং লেখা। এমন যদি হয় যে তুমি জীবনে প্রথম কোন লেখা/অনুচ্ছেদ/কবিতার অংশবিশেষ অনুবাদ করছো এবং সেটা পরীক্ষার হলে বসেই তাহলে কেমন ভয়ঙ্কর অসহায় পরিস্থিতির কবলে পড়তে হবে তা নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছো। তাই সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু নিয়মিত লেখার অনুশীলন অব্যাহত রাখলে দেখবে তোমার মাঝে সংকোচ কেটে গিয়েছে এবং অভূতপূর্ব স্বত:স্ফূর্ততা বিরাজ করছে- যা তোমাকে পরীক্ষার হলে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং প্রতিযোগিতার দৌড়ে অগ্রগামী করে তুলবে।

১০. লিখিত অংশে একটি প্রশ্নের কতটুকু লিখবো?

- আসলে একটি প্রশ্ন কতটুকু লিখবে এটা বহুলাংশে নির্ভর করে তুমি একটি প্রশ্নে কতটুকু সময় পাবে তার উপর। অর্থ্যাৎ কতটুকু লিখবে তা নির্ধারণ করবে কতসময় পাচ্ছো তার উপর! তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে লিখিত অংশে মোট ৪০ নম্বরের জন্য সময় বরাদ্দ ৪৫ মিনিট। তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো একটি প্যারাগ্রাফে যদি ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে তবে তোমার উচিত ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে যথাযথ ভাব ফুটিয়ে তুলে ব্যাকরণিক-বানানগত শুদ্ধতা বজায় রেখে ১০-১২ টি বাক্যে সমাপ্ত করা। তাহলে এবার বুঝতে পারেছো ৫ নম্বরের প্যারাগ্রাফের কতটুকু লিখবে?

আর অবশ্যই লিখিত পরীক্ষায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর প্রদানের প্রচেষ্টা চালাবে। তুমি এক/একাধিক প্রশ্নের উত্তর জানা সত্ত্বেও সময় সংকটের জন্য ফেলে আসো তবে তা তোমার জন্য অনেক অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফুল আন্সার করবে, অবশ্যই- মনে থাকবে তো?

তোমাদের জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং শুভকামনা। ভালো থেকো